ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

জনগণ মুখিয়ে আছে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করতেঃ সালাহউদ্দিন আহমদ 

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া

উচ্চ আদালতে প্রার্থীতা ফেরা নিয়ে আদেশের অপেক্ষা

পেকুয়া) আসনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েও বারবার অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে  জয়ের মালা পড়তে পারেননি  সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেয়ে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম।

কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদ বিভক্তির জেরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ ও নিজের নানাবিধ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন এই আসনের বর্তমান এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম।

এরই প্রক্ষিতে বর্তমান এমপি জাফর আলমের বদলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকার মাঝি মনোনীত করেছেন  কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে। গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড থেকে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।

এরপর গত ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার ১ আসনে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ঋণখেলাপী অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।

এই আদেশের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন সিআইপি  নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আপীল করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর আপীল শুনানিতে ইসি আবেদনকারী সালাহউদ্দিন আহমদকে ঋণখেলাপীর সেই অভিযোগ আলোকে প্রার্থীতা বাতিলের বিষয়টি বহাল রাখেন।

এই প্রেক্ষাপটে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ঋণখেলাপী সংক্রান্ত মামলার আদেশ ও নির্বাচন কমিশনের ( ইসি) আদেশ চ্যালেঞ্চ করে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে পুনরায় আপীল আবেদন জমা দিয়েছেন। আজ বুধবার ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আপীল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন সিআইপির ঘনিষ্ঠ সুত্র।

মুল কথা হচ্ছে, আজ বুধবার আদালতে ফাইনাল পরীক্ষায় মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। আপীল শুনানিতে আদালত কতৃক তিনি দায়মুক্তি পেলে নৌকা নিয়ে চকরিয়া পেকুয়া আসনে ভোটযুদ্ধে নামতে আর আইনী কোনো বাঁধা থাকবে না। আর যদি আদালত কতৃক ঋণখেলাপীর অভিযোগটি ধরে রেখে তাঁর প্রার্থীতা ফিরিয়ে না দেন, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে ভোটের মাঠে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির ভুমিকা নাটকীয় মোড় নিতে পারে এমন সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।

জানা গেছে, কক্সবাজার ১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির প্রার্থীতা নিয়ে ঋণখেলাপীর অভিযোগে ইতোমধ্যে নিন্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালতে কয়েকটি আপীল মামলায় পক্ষে-বিপক্ষে আদেশ হয়েছে।

এরই মধ্যে  গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপির তালিকা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিন্নাত হকের বেঞ্চে একটি রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বেঞ্চটি ঋণখেলাপীর তালিকা থেকে সালাহউদ্দিন সিআইপিকে বাদ দেওয়ার জন্য  আদেশ দেন।

গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের অর্থঋণ যুগ্ম জেলা জজ আদালত মামলার ৬ নম্বর আসামি সালাহ উদ্দিন আহমদকে ঋণখেলাপি থেকে অব্যাহতি দিয়ে একটি আদেশ দেন। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর ওই আদেশের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংক চট্টগ্রাম লালদীঘি শাখার পক্ষ থেকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রা ঋণ যুগ্ম জেলা জজ আদালত কতৃক দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

এরপর উভয়পক্ষ রিটের বিরুদ্ধে আপিল করেন।  আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েত রহিম দুটি রিটের নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিচারপতিরা শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের একক বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

এই প্রেক্ষাপটে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ঋণখেলাপী সংক্রান্ত মামলার আদেশ ও নির্বাচন কমিশনের ( ইসি) আদেশ চ্যালেঞ্চ করে গত ১৭ ডিসেম্বর পুনরায় হাইকোর্টে আপীল আবেদন জমা দিয়েছেন। আজ বুধবার ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আপীল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে

কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি ঋণখেলাপী নই। সেটি জনতা ব্যাংকের মামলা থেকে অর্থঋণ আদালত কতৃক আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত। এরইপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি তালিকা থেকেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কতিপয় মহলের চক্রান্তে আমার প্রার্থীতা নিয়ে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আমি আশাবাদি, আইনী লড়াইয়ে আমার মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হবে। কারণ  আমার সঙ্গে নিপিড়ীত চকরিয়া পেকুয়াবাসির দোয়া আছে। নির্বাচনী এলাকার জনগণ আগ্রহে মুখিয়ে আছেন নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করতে।

বর্তমানে কক্সবাজার ১ চকরিয়া পেকুয়া আসন থেকে সাত জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়ে প্রতীক পেয়ে ভোটযুদ্ধে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।

তারা হলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (হাতঘড়ি),  বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম (ট্রাক), জাতীয় পাটির (এরশাদ) হোসনে আরা আরজু (লাঙ্গল), বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পাটির হাজি আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের বেলাল উদ্দিন ছিদ্দিকী (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন (ঈগল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কমেডিয়ান কমরউদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)। ###

পাঠকের মতামত: